সনাতন ধর্ম সম্পর্কে কিছু নাস্তিক, কুধর্মী ও বিধর্মীদের অপপ্রচারের প্রশ্নের দাঁতভাঙ্গা জবাব
বর্তমানে অনলাইনে কিছু জ্ঞানপাপীর আগমন হয়েছে তারা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অপপ্রচার করে। তাদের অন্যতম নিকৃষ্ট একটি লেখা যেখানে তারা শুরুতেই বলে দেই "হিন্দু ভাইয়েরা মন খারাপ করবেননা আমি শুধু জানতে চাই" এই লেখাটা হলো একধরনের ভাঙ্গা ক্যাসেট এর মতো, আর ঐ সমস্ত জ্ঞানপাপীরা হলো রেডিও এর মতো, শুধু বলেই যাবে কারো কথা শুনতে চায় না। তাই তাদের সেই লেখাটার বিরুদ্ধে লেখা অতীব জরুরী বলে মনে করি।
কেননা সবাই তো অার সত্যটাকে বের করতে চায় না।

আসুন তাদের অপপ্রচারের জবাবটা দিয়ে দিই----
----------------------------------------
★তাদের দাবি---
রিগবেদ অধ্যায়-৩, খন্ড-৩১, শ্লোক: ১-২ ‘‘পিতা
তার মেয়ের সাথে অশ্লীলকর্মে
লিপ্ত’’- =>এছাড়া মা- ছেলে দূষ্কর্ম,
এমন বিশ্রি বর্ণনা যেই গ্রন্থে তা কি
করে সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে?
.
★আমার জবাবঃ- তাদের এই দাবিটা পড়েই এদের দৌড় সম্পর্কে ভালো ধারণা হয়ে গেছে, কেননা ঋকবেদে অধ্যায় : খন্ড : শ্লোক -দিয়ে কোন মন্ত্র নেই,ঋগবেদে মন্ত্রগুলো সুক্ত ও মন্ডলে বিভক্ত। তবুও তাদের সেই রেফারেন্স অনুসারে ঋগ্বেদে পেলাম---
→ শাসদ্বহির্দুর্হিতুর্নপ্তাং গাদ্ধিদ্ধাঁ ঋতস্য দীধিতিং সপর্য্যন।
→পিতা যত্র দুহিতুঃ সেকমৃঞ্জন্ সং শগ্ম্যেন মনসা দধম্বে।।
( ঋগ্বেদ-- ৩/৩১/১)
.
★ অনুবাদ - “ঐ আত্মহীন পিতা, যে পরিবারের ধারক(পোষক), নির্দেশ করে তার নাতি(পুত্র তুল্যা)যে তার কন্যার সন্তান এবং যজ্ঞ করার দক্ষতার উপর আস্থা রাখে, সন্মানক(তার জামাই কে)নানাবিধি উপহারের সঙ্গে, সেই পিতা বিশ্বাস করে কন্যার গর্ভধারণের উপর, নিজেকে সমর্পণ করে শান্তিপূর্ণ ও খুশি মনে”।।
.
★ভাবার্থ- “হে মানব! যেমন একটি কন্যা পিতা হতে জন্মলাভ করে, সুতরাং এই উষা(ভোর) জন্ম নেয় সূর্য হতে, যেমন স্বামী গর্ভধারণ করাই তার স্ত্রীর, সুতরাং এই সূর্য স্থাপন করে তার বীর্য(তেজঃ) ভোরের আলোকে রশ্মি আকারে। এই উষা হল সূর্যের কন্যা তুল্য যেখান থেকে জন্ম নেই একটি পুত্র উষা লগ্নে সকালের আকারে”
.
★এটি ভোরের অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য বর্ণনাকারী একটি বেদ মন্ত্র। ভোরে উদিত সূর্য রশ্মি হল এখানে “বীর্য” অর্থ্যাৎ “সূর্যের তেজ” ।এখানে সেই মূহর্ত অর্থ্যাৎ উষালগ্ন যা অপূর্ব সুন্দর তাই নারী রূপে কল্পিত সূর্যকন্যা এবং সকাল যা আলোক তেজঃ রূপি ও পুত্ররূপে কল্পিত উষার পুত্র।
(অনুবাদ- পন্ডিত সত্যকাম বিদ্যালংকার)
.
★তাদের দাবি --
শিব ৬০,০০০ বিবাহ করেছিল সে মারা যাবার পর তার লিঙ্গকে পূজা করা হয় । একজন শিষ্টাচার হিন্দু কোন যুক্তিকতায় তার স্ত্রীর দুধ দিয়ে শিবের গোপন অঙ্গ ধৌত করে? এটা কি সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট্য? এমন কুরুচিপূর্ন
আদেশ সৃষ্টিকর্তা দিতে পারেন কি?
.
★আমার জবাবঃ- এই দাবিটা কোথা থেকে পেয়েছে তার কোন সূত্র নেই, শিব ৬০হাজার বিবাহ করেছিল এটা কোন শাস্ত্রে আছে তা কিন্তু এরা উল্লেখ করেনি, করবেই বা কি করে, মিথ্যাবাদীরা কখনো সত্য লুকাতে পারে?
তবুও একটা কথা বলতেই হয় শিব পার্বতীকে বিবাহ করেছিলেন।
যেই সতী তিনিই আবার পরজন্মে পার্বতী।
.
সৌরপুরাণ ৫৮/১৪ এবং ৫৮/১৫ তে স্পষ্ট উল্লেখ আছে---
→গৃহীহেতি শিবঃ প্রাহ পার্ব্বতী পর্ব্বতেশ্বরম্।
→তদ্ধস্তে ভগবান্ শম্ভুরঙ্গুলীয়ং প্রবেশয়েৎ।। ১৪
→ইমঞ্চ কলসং হৈমমাদায় ত্বং নগোত্তম।
→যাহি গত্বা ত্বনেনৈব তামুমাং স্নাপায় ত্বরা।। ১৫
.
★বঙ্গানুবাদ- শম্ভু, পর্ব্বতেশ্বরকে কহিলেন, -- আমি পার্বতীকে গ্রহণ করিলাম। পরে দেবীর হস্তে একটি অঙ্গুরীয় প্রদান করিয়া নগোত্তমকে কহিলেন, -- আপনি এই হৈম কলস লইয়া গিয়া সত্ত্বর ইহা দ্বারা সেই উমাকে স্নান করাইয়া দিবেন।
.
★শিবলিঙ্গ→ শিবলিংঙ্গ মানে যৌনাঙ্গ যে এই কথাটি লিখেছেন সে সংস্কৃত ভাষা সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখেন না। শিব সংস্কৃতে शिव, Siva যার বাংলা অর্থ শুভ বা মঙ্গল আর লিংঙ্গ অর্থ প্রতিক বা চিন্হ যার সম্পুর্ন অর্থ হচ্ছে সর্বমঙ্গলময় বিশ্ববিধাতার প্রতীক। আবার ব্যাকারনে যেটা পুরুষ বোঝায় তাকে পুঃলিংঙ্গ, যেটা দ্বারা নারী বোঝায় তাকে স্ত্রীলিংঙ্গ,যেটা দ্বারা নারী পুরুষ উভয়ই হতে পারে তাকে উভয় লিংঙ্গ ও যেটা দ্বারা জর বস্তু বোঝায় তাকে ক্লীবলিংঙ্গ বলে, কোন ভাবেই এটা যৌন অঙ্গ’কে বোঝায় না, উধারনস্বরুপ চেয়ার দেখলে বুঝি এটা একটা জর বস্তু তাই এটিকে ক্লীবলিংঙ্গ বলা হয়, তেমনি ভাবে যে কালোপাথরটি (শিবলিংঙ্গ) দ্বারা আমরা শিবকে বুঝি, তাই ওটাকে আমরা শিবলিংঙ্গ বলি, ওটা শিবের প্রতিক, বাংলাদেশের প্রতিকি যেমন বাংলাদেশের পতাকা বহন করে, তেমনি শিবলিংঙ্গ শিবের প্রতিকি বহন করে,পতাকাকে স্যালুট করলে যেমন দেশকে সন্মান করা হয় তেমনি শিব লিংঙ্গের পুজা করলে শিবের পুজা করা হয়।
.
★কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের লিখা একটা কাব্য আছে "দেবতায় মনুষ্যত্ব আরোপ" সেখানে রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেছেন অল্পবিদ্যধারী আধুনিক মানুষরা কিভাবে প্রাচীনা মানুষদের দর্শন ও চিন্তা ভাবনার বিপরীতে, মানুষের বিভিন্ন দোষ ও স্বভাবকে তারা দেবতাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে, দেবতাদের তার তাদের স্বভাবের প্রতিছবি হিসাবে দেখে বা চিন্তা করে।
এরজন্য সংস্কৃত লিঙ্গ শব্দের ৩১ টি ও সংস্কৃত যোনি শব্দের ৩৪টি আলাদা আলাদা অর্থ থাকলেও কুৎসাকারীরা প্রতিক্ষেত্রে লিঙ্গ মানে পুরুষযৌনাঙ্গ ও যোনি মানে স্ত্রীযৌনাঙ্গ ধরে বসে।
যদি শিবলিঙ্গকে অর্থগত দিক দিয়ে বিবেচনা করা হয় তবে এটা "মঙ্গলের(শিব) প্রতিক(লিঙ্গ)" হবে এবং যদি সনাতন দর্শন এর দিক দিয়ে বিবেচনা করা হয় তবে এটা “লিঙ্গশরীরের প্রতিক” হবে এবং যদি এটা আধ্যাত্ম দিক দিয়ে বিবেচনা করা হয় তবে এটা "শিবশক্তির" প্রতিক হবে, তিনটি ক্ষেত্রেই শেষে সেই একই জিনিস -"লিঙ্গশরীরের" দিকে নির্দেশ দেয়।
লিঙ্গশরীর কি?
সাঙ্খ্য, বেদান্ত ও যোগ দর্শন মতে শরীর তিন প্রকার -
১.স্থুল শরীর
২.লিঙ্গ শরীর
৩.করণ শরীর
লিঙ্গশরীর হল এক কথাই সূক্ষ বা ভৌতিক দেহ। জীবদেহের মন ও বুদ্ধির কারক হল এই লিঙ্গশরীর। ইহা কার্যগত ভাবে নাড়ী ও ষটচক্র নিয়ে গঠিত। নাড়ীর মাধ্যমে শক্তি সক্রিয় থাকে এবং ছয় চক্র - মূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ ও আজ্ঞা দ্বারা সেই শক্তি নিয়ন্ত্রিত হয়। এই লিঙ্গশরীর জীবের জীবনের আধার, তাই এই লিঙ্গ শরীরটিই জীবনের প্রতিক। সাঙ্খ্য দর্শনের তত্ত্ব অনুসারে এই লিঙ্গশরীরটির সঙ্গে ২৫টি তত্ব অন্তর্ভুক্ত, যথা - পুরুষ, প্রকৃতি, বুদ্ধি, অহংকার, মন, ৫টি ইন্দ্রিয়, ৫টি কর্মেন্দ্রিয়, ৫ম তন্মাত্র, ৫ম মহাভূত। পুরাণে গিয়ে এই পুরুষ শিব নামে ও প্রকৃতি মা শক্তি নামে আখ্যায়িত হয়েছে।
.
★তারপর একটা ভুল ধারনা আছে যে এই জ্ঞানপাপীরা বলে কেবল স্ত্রী লোক নাকি শিবলিঙ্গের পূজা করে।
কিন্তু তারা জানেনা নারী পুরুষ সকলেই শিবলিঙ্গের পূজা করে। তারা জানবেই বা কি করে ঐযে প্রথমেই বলেছিনা ওরা হলো
রেডিও শুধু একতরফা বলে থাকে শুনেনা।
.
★তাদের দাবি --
শিব তার নিজের ছেলে গনেশকে
চিনতে পারেনি গর্দান কেটে
ফেলেছিলেন তাহলে তিনি তার
সৃষ্টিকে কি করে চিনবেন? ভুলে
যাওয়া কি সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট্য?
.
★আমার জবাবঃ- এই প্রশ্নটা শুনে একটু রাগ হয়েছিল, কেননা একজন পিতা তার সন্তানকে চিনবেনা এটা কোন ধরনের কথা, এইসব জ্ঞানপাপীরা কি সনাতন ধর্মের শাস্ত্র পড়ে পন্ডিতগিরী করে নাকি কপি মেরে মেরে পন্ডিতগিরী করে সেটা কেবল ভগবানই জানেন।
.
★তাদের প্রশ্নের উত্তরটা দিবো কেবল একটা টপিকে, "শিব কি গণেশকে চিনতো নাকি চিনতোনা???
কে কার মস্তক চিন্ন করলো এই প্রসঙ্গে যাবোনা। কেবল প্রমাণ করবো শিব গণেশ কে জন্মের পর থেকে চিনতো যে গণেশ তাঁর পুত্র।
.
★লিঙ্গপুরাণ , পূূর্ব্বভাগ, ১১৫তম অধ্যায়ের ১১-১৪ তম শ্লোকে উল্লেখ আছে---
"সর্বেশ্বর ভগবান ভবপুত্রকে জাতমাত্র অবলোকন করিয়া তদুদ্দেশে কর্তব্য জাত-কর্ম্মানি সংস্কার স্বয়ং করিলেন। তারপর জগদীশ্বর সুকোমল হস্তদ্বারা তনয়কে গ্রহণ করিয়া আলিঙ্গন করত মস্তকে চুম্বন করিলেন"
.
এই থেকে প্রমাণ হয়, গণেশের জন্মের পরই শ্রীশিব তাকে চিনতেন, আহারে জ্ঞানপাপীরা এখানেও তোমাদের ভওতাবাজির ইতি ঘটলো??
.
★তাদের দাবি --
দেবদাসীর ও যোগিনীর মত পতিতা চরিত্রের সাথে ভগবান ও ব্রাহ্মনগণ কি করে অশ্লীলকর্মে লিপ্ত হন? যদি তারা
প্রকৃতার্থে ভগবান হয়ে থাকেন?
.
★আমার জবাবঃ- এই প্রশ্নটা ততোটা গুরুত্ব বলে মনে করি না, কেননা যোগিনী কিন্তু পতিতাবৃত্তি করেছিল এরকম কোন বিখ্যাত নারী সনাতন ধর্মে ছিল না। যদি জ্ঞানপাপীরা কারো নাম নির্দিষ্ট করে বলতো তবে অবশ্যই সেটা বিশ্লেষণ করতাম।
কিন্তু তারা অন্ধকারে ঢিল মারলো।
তারপর আবার বললো ভগবান ও ব্রাহ্মণগণ কোন অশ্লীল কর্মে লিপ্ত হলো।
কিন্তু বললোনা কে করলো?
কোন ব্রাহ্মণ সেটাই তো জানলাম না, যদিওবা কোন ব্রাহ্মন করে থাকে তবে সেটা সনাতন ধর্মের কি দোষ???
ব্রাহ্মন এর কথায় কি সনাতন ধর্ম চলে???
সনাতন ধর্মতো ঈশ্বর প্রেরিত পবিত্র বেদ এবং শ্রীগীতার আলোকে চলে।
মানুষের মধ্যে যদিও কেউ খারাপ কাজ করে তবে ধর্মের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ সনাতন ধর্ম সর্বদাই মানুষকে সঠিক পথে চলতে বলে।
.
★তাদের দাবি → অশ্লীল ভঙ্গিমায় উলঙ্গ নারী, মুখে ও দাঁতে রক্ত ও হাতে রক্তাক্ত তলোয়ার কি করে সৃষ্টিকর্তা হতে পারে?
উদাহরন- দূর্গা।
.
★আমার জবাবঃ- এরা এতোটাই বিকৃত মস্তিষ্কের হতে পারে তা অকল্পনীয়। এদের মাথাতে সর্বদা অশ্লীলতা ঘুরাপাক খায়, সেইজন্য সবকিছুতেই অশ্লীলতা খুজে পায়।
সনাতন শাস্ত্রে দূর্গা শব্দটিকে বিশ্লেষন করা হয়েছে এভাবে---
★দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।
★উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
★রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
★ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।
.
★ অর্থাৎ, ""দ" অক্ষরটি দৈত্য বিনাশ করে, উ-কার বিঘ্ন নাশ করে, রেফ রোগ নাশ করে, "গ" অক্ষরটি পাপ নাশ করে এবং অ-কার শত্রু নাশ করে। এর অর্থ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।"
.
★অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম বলেছে, "দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা" । অর্থাৎ, যিনি দুর্গ নামে অসুরকে বধ করেছিলেন, তিনি সব সময় দুর্গা
নামে পরিচিত।
.
★অসুরেরা মা দূর্গাকে দেখে ভয় পায়, কিন্তু এই জ্ঞানপাপীরা যদি মা দূর্গাকে দেখে যদি ভয় পায় তবে আমার কিছু করার নেই।
.
★তাদের দাবি -- কৃষ্ণা যদি সৃষ্টিকর্তা হয় তবে সে কেন তার মামীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখলো? তবে কি
সৃষ্টিকর্তা মানুষের সাথে এমন অবৈধ কর্মে লিপ্ত হয় যা তার নিজেরই আইনের বর্হিভূত?
.
★আমার জবাবঃ-
→এই জ্ঞানপাপীরা কিন্তু রেডিওর মতো সেটা প্রমাণ হয়েই যাচ্ছে।
তা না হলে দেখেন শ্রীকৃষ্ণ নাকি মামির সাথে প্রেম করেছে???
কিন্তু কোনো রেফারেন্স তো দেয়নি উল্টো পরমেশ্বরের নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। জাহান্নামে যাবিরে জ্ঞানপাপীরা।
.
★ আমরা সকলেই এই কথাটা ভালো করেই জানি যে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেবকী এবং বসুদেবের সন্তান রুপে এই ধরাধামে অবতীর্ণ হন। (শ্রীমদ্ভাগবত → ১০/৩/৮) যিনি দেবকীর ভাই তিনিই শ্রীকৃষ্ণের মামা এটাই স্বাভাবিক।
দেবকী ছিলেন দেবক এর কন্যা (ভাগবত-১০/১/৩১) এবং কংস ছিলেন দেবকীর খুল্লতাত বা কাকাতো ভাই (ভাগবত- ১০/১/৩০) কংসের ছিলেন দুই স্ত্রী অস্তি এবং প্রাপ্তি ।
তাহলে পুরোটা ক্লিয়ার যে কংসের স্ত্রীর সাথে শ্রীকৃষ্ণের কোন সম্পর্ক নেই।
আর বাকী থাকে রাধা, রাধা সঙ্গে কংসের বিবাহ হয়নি সেটা ওপরের ব্যখ্যা থেকেই জেনেছি, কেননা রাধার সঙ্গে কংসের কোন দিন দেখায় হয়নি, যার সাথে দেখা হয়নি তার সাথে বিবাহ হবে এটা যৌক্তিক কতোটুকু সেটা আপনারাই বিবেচনা করবেন।
.
★তাদের দাবি -- কিভাবে রাম সৃষ্টিকর্তা হতে পারে কারণ সে প্রয়োজনে খাবার খেয়েছে, ঘুম গেছে, বিয়ে করেছে
দৈহিক তাড়নায়, রাম নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করেছে এসব কি সৃষ্টিকতার কর্ম?
যদি রাম সৃষ্টিকর্তাই হন কেন তিনি হনুমানের সাহায্য চাইবেন? তাহলে কি সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার কমতি আছে?
.
★আমার জবাবঃ-
শ্রী রাম হচ্ছে ঈশ্বরের ৭ম অবতার। তিনি মানুষ রুপে পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করেছিলেন। সুতরাং মানুষের মত কাজকর্ম রাম করেছিলেন কারন তিনি মানুষ কিন্তু ঈশ্বরের অবতার। শ্রীমদভগবত গীতার ৯:১১ তে ভগবান বলেছেনঃ আমি যখন মানুষ রুপে অবতীর্ন হই,মুর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে তারা আমার পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত হন না, এবং তারা আমাকে সর্বভূতের মহেশ্বর বলে জানে না।। অর্থাৎ ভগবান মানুষরুপে পৃথিবীতে অবতীর্ন হতে পারেন।
শ্রীরাম মানুষরুপে অবতীর্ণ হয়েছেন তাই মানুষের মতো বেচে ছিলেন এই ধরাধামে, এতে অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই জ্ঞানপাপীগণ।
.
★শ্রীরাম কি মাতা সীতাকে সন্দেহ করেছিল??
.
★জ্ঞানপাপীরা তোমরা নিজেরাই দেখো --- বাল্মীকি রামায়ন কি বলে---
.
★पश्यतस्तां तु रामस्य समीपे हृदयप्रियाम् |
★जनवादभयाद्राज्ञो बभूव हृदयं द्विधा||६-११५-११
Valmiki Ramayana 6.115.11 পড়লে বুঝতে পারা যাচ্ছে "শ্রী রাম লক্ষ্য করলেন সীতা দেবী কে নিয়ে কিছু লোক কুত্সা রটিয়ে বেড়াচ্ছে এর জন্য সীতা দেবী মন দুঃখী"।
.
★पृथक्स्त्रीणां प्रचारेण जातिं त्वं परिशङ्कसे |
★परित्यजेमां शङ्कां तु यदि तेऽहं परीक्षिता
||(६-११६-७)
Valmiki Ramayana 6.116.7 পড়লে বুঝতে পারা যাচ্ছে "শ্রী রাম সীতা দেবী কে বুজাচ্ছেন এক অভদ্র মহিলার আচরণ দ্বারা আপনি দুঃখী হয়েন না"
.
★त्वया तु नरशार्दूल क्रोधमेवानुवर्तता |
★लघुनेव मनुष्येण स्त्रीत्वमेव पुरस्कृतम् ||
६-११६-१४
Valmiki Ramayana 6.116.14 পড়লে বুঝতে পারা যাচ্ছে "সীতা দেবী শ্রী রাম কে বুজাচ্ছেন তিনি দুর্বল ও আবেগে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ও
womanliness অগ্রাধিকার দিয়েছেন"
.
★चितां मे कुरु सौमित्रे व्यसनस्यास्य भेषजम् |
★मिथ्यापवादोपहता नाहं जीवितुमुत्सहे ||
६-११६-१८.
Valmiki Ramayana 6.116.18 পড়লে বুঝতে পারা যাচ্ছে "সীতা দেবী মিথ্যা দোষারোপ থেকে মুক্ত হবার জন্য লক্ষ্মণ কে আদেশ দিচ্ছে আগুনের চিতা তৈরী করার জন্য"
.
জ্ঞানপাপীরা এবার বুঝলে তো তোমাদের জ্ঞানের পরিধি কতোটুকু???
শ্রীরাম মাতা সীতাকে সন্দেহ করেনি।
.
★তাদের দাবি --
রাম হনুমানের দুই ভাইকে কেন অকারনে খুন করলেন যেখানে রামের সাথে তাদের কোন শত্রুতা ছিলনা?
সৃষ্টিকর্তা হয়ে অপরাধ করা কি সম্ভব?
.
★আমার জবাবঃ- রাম হনুমানের ভাইকে হত্যা করেননি। হত্যা করেছেন সুগ্রীবের ভাই বালিকে।কারণ বালি সুগ্রীবের স্ত্রীকে বন্ধি রেখেছিলো, এবং সুগ্রীবকে ধন সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছিল বালি। আর বালি ছিলো একজন দুরাচারী শাসক। অধার্মিকদের দন্ড প্রধানের জন্য এবং সাধুদের রক্ষার জন্য ঈশ্বর অবতার রুপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন।
.
★তাদের দাবি --
রাবন যদি শয়তান হয়ে একদিনে লঙ্কায় পৌঁছাতে পারে তবে রাম সৃষ্টিকর্তা হয়ে কেন ১২ বছর লাগলো
তাও আবার হনুমানের সাহায্যে? শয়তানের শক্তি সৃষ্টির্কতা হতে কি করে বেশি হওয়া সম্ভব?
.
★আমার জবাবঃ- শ্রীরাম সমুদ্র পার হয়েছেন সমগ্র বানর সেনা নিয়ে। বানর সেনারা শ্রীরামকে সহায়তা করতে চেয়েছিল, অার ভগবান সর্বদা ভক্তদের অভিলাষ পূরণ করেন সেটা অার নতুন কিসের???
অার সমুদ্র পার হতে ১২ বছর লাগেনি। শ্রীরাম ১৪ বছরের জন্য বনবাসে গিয়েছিল----
★ বাল্মীকি রামায়ণ-- অযোধ্যা কান্ড, ১১তম সর্গের ২৬ তম শ্লোকে কৈকয়ী দশরথকে বলেছেন " "Rama has to take refuge in the forest of Dandaka for fourteen years and let him become an ascetic wearing rags, deer skin and matted hair"
এখানে স্পষ্ট ক্লিয়ার শ্রীরামকে চৌদ্দ বছরের জন্য বনে পাঠানোর জন্য বলতেছে"।
এবং অযোধ্যা কান্ডের,১৯ তম সর্গের, ২নং শ্লোকে শ্রীরাম বলতেছেন---
★ एवम् अस्तु गमिष्यामि वनम् वस्तुम् अहम् तु अतः |
★जटा चीर धरः राज्ञः प्रतिज्ञाम् अनुपालयन् || २-१९-२
.
★Translation --- "Let it be, as you said it. I shall fulfil the king's promise, go to the forest from here to reside there, wearing braided hair and covered with a hide."
.
অর্থাৎ শ্রীরাম বনে যাওয়ার ব্যপারে না বলেননি।
.
এখানে স্পষ্ট ক্লিয়ার রাম চৌদ্দ বছরের জন্য বনে গিয়েছিল, সমুদ্র পার হতে ১৪ বছর লেগেছিল সেটা মিথ্যা কথা।
.
★তাদের দাবি --
কৃষ্ণা সৃষ্টিকর্তা হয়ে কিভাবে নারীদের স্নানরত দৃশ্য উপভোগ করেন ও তাদের পোষাক লুকিয়ে রেখে দেন?
.
★আমার জবাবঃ- শ্রীকৃষ্ণ কি নারীদের স্নানরত দৃশ্য উপভোগ করতে ছিলো সেটা এই লেখাটি পড়লে বুঝতে পারবেন।
.
তবুও আপনাদের জন্য কয়েকটা প্রমাণ দিচ্ছি যেটার মাধ্যমে বুঝতে সহজ হবে---
★ ভাগবত:- ১০/২২/৮
"পরীক্ষিত বললেন- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন যোগেশ্বরগণেরও ঈশ্বর, তার অজানা কোন কিছুই ছিলনা। তিনি তাদের(গোপী) মন বাসনা সফল করার জন্য বয়স্য পরিবৃত হয়ে সেই যমুনাপুলিনে আগমন করলেন। "
.
★ভাগবত:- ১০/২২/৯
"তীরে পরিত্যক্ত গোপ কন্যাদের বস্ত্রগুলি সংগ্রহ করে তিনি সহ একটি কদম বৃক্ষের ওপর আরোহন করলেন এবং তার সঙ্গী বালকেরা এই কৌতুক দেখে হাসতে লাগলো এবং তিনিও হাসতে লাগলেন এবং কুমারীদের পরিহাস করতে বলতে লাগলেন।
.
এখানে কিন্তু উপভোগ করার কোন কথায় নেই, কাপড় নিয়ে তৎক্ষনাৎ গোপীদের সেটা বলেও দিয়েছে।
.
আবার কি কারণে কাপড় গুলি নিয়েছে সেটা হলো---
★ ভাগবত:- ১০/২২/১৯
"প্রিয় গোপীকাগণ তোমরা যে ব্রত গ্রহণ করেছিলে তা অত্যন্ত নিষ্টার সঙ্গে পালন করেছো তাতে কোন সন্দেহ নেই, অজ্ঞানতই তোমাদের একটা ক্রুটি ঘটে গিয়েছে, ব্রত পালনকালে জলে বিবস্ত্র হয়ে স্নান করা ভালো নয়, এতে জলের দেবতার(বরুন) প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়, তাঁর কাছে অপরাধ হয়, সুতরাং তোমরা পাপ মোচনের জন্য তার কাছে জোড়হাত মাথায় ঠেকিয়ে তাকে প্রণাম করে নিজেদের কাপড় নিয়ে যাও।"
.
এই শ্লোক অনুসারে সমগ্র মানব সমাজ একটি শিক্ষা পেলো সেটা হলো বিবস্ত্র হয়ে স্নান করা ধর্ম বিরুদ্ধ কাজ।
এখানে কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ একা ছিলেননা, ভাগবত ১০/২২/২২ অনুসারে সেখানে বয়স্যরাও ছিলেন। তাদের দেওয়া তথ্যমতে শ্রীকৃষ্ণ একাই ছিলেন। কিন্তু পুরো ঘটনাটাই বিপরীত।
সেখানে প্রথমত শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন, দ্বিতীয়ত গোপ বালকেরা ছিলেন, তৃতীয়ত জলের দেবতা বরুনদেব ছিলেন এবং চতুর্থত ঘটনার শেষের দিকে বয়স্যরাও ছিলেন।
তাই জ্ঞানপাপীরা সাবধান হও, তা নাহলে মিথ্যাবাদী প্রমাণ হতেই থাকবে।

Sayan Dev Sharma

শেয়ার করে নাস্তিক ও বিধর্মীদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ